Recent Posts

LightBlog

Breaking

Sunday, January 22, 2017

কপি

মানুষটির নাম ছিল কালদি। ইথিওপিয়ার ছাগল পালক। অনেকে তাঁকেই কফি বিনের আবিষ্কারক বলতে ভালোবাসে। ছাগল চরাতে গিয়েই একদিন
সে দেখে ছাগলগুলো লম্ফঝম্ফ করছে। অবাকই হয়। আশপাশে ছড়িয়ে থাকা কিছু ফল মুখে দিয়ে অন্য রকম স্বাদ পায়। আরো কিছু সংগ্রহ করে কাছের এক ধর্মশালায় নিয়ে যায়। সেখানেই প্রথম কফি পানীয় তৈরি হয়। তবে সময়কাল কেউ পরিষ্কার করে বলেনি। ইয়েমেনের সুফি আখড়ায় কফি পানের কিছু তথ্য আছে গবেষকদের কাছে। সেটি ১৫ শতকের।
অনেকে বলে, ইয়েমেনের সুফি আকবর আল-হাসান আল-সাধিলি ইথিওপিয়া বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে হয়তো কফি ইয়েমেনে নিয়ে আসবেন। কয়েকজন গবেষক অবশ্য শেখ আবুল হাসান কাধেলির ছাত্র ওমরের নামও বলেছেন। ওমরকে একবার একটা গুহায় নির্বাসন দেওয়া হয়েছিল। ক্ষুধায় কাতর ওমর কাছের গুল্ম থেকে ফল এনে চিবিয়েছিলেন। এর স্বাদ তিতা হওয়ায় তিনি ভেজে খাওয়ার বুদ্ধি করেন। তাতে স্বাদ আরো তিতা হয়ে যায়। শেষে ওমর সেগুলো পানিতে সিদ্ধ করে খাওয়ার কথা ভাবেন। পান করার পর দেখেন তাঁর ক্লান্তি অনেকটাই দূর হয়েছে।



শুরুর দিনগুলো
ইয়েমেনের ব্যবসায়ীরা একপর্যায়ে কফি চাষ শুরু করেন। কাহওয়া শব্দের মানে হচ্ছে ওয়াইন আর কাহওয়া আল-বুনের মানে বিনের ওয়াইন। ইয়েমেনি সুফি সাধকরা কফি পান করতেন মূলত রাত জাগরণের উদ্দেশ্যে।
মধ্য যুগের কুর্দিশ কবি শেখ আহমাদের লেখা থেকে জানা যায়, ইয়েমেন থেকে যাত্রা শুরু করে কফি মক্কা-মদিনায় যায়। তারপর যায় কায়রো, দামেস্কো, বাগদাদ ও কনস্টান্টিনোপলে। মক্কায় কফি জনপ্রিয় হয় ১৫ শতকে। মিসর আর উত্তর আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়ে আরো কিছু পরে। ইয়েমেনের বন্দর মোকা এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অটোমান সাম্রাজ্যে কফির আগমন ১৫৫৪-র দিকে। কট্টর ধর্মীয় নেতারা মাঝে একবার কফি বর্জনের সিদ্ধান্ত নেন। পরে সুলেমানের গ্র্যান্ড মুফতি এল এবুসুনদ এফেন্দি নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেন। কায়রোতেও কফি বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল। অর্থোডক্স চার্চ কফিকে নিষিদ্ধ রাখে বেশ কিছুকাল।
কফি একসময় পৌঁছে যায় মাল্টায়। সেখান থেকে ইতালি। সময়টা ষোল শতকের মাঝামাঝি। সেন্ট জনের নাইটরা তুর্কি মুসলমানদের বন্দি করে দাস বানান। তাঁদের প্রিয় পানীয় ছিল কফি। জার্মান পর্যটক গুস্তাভ সমারফিল্ড লেখেন, তুর্কি দাসরা তামাকের মতো গুঁড়া, পানি আর চিনি মিশিয়ে যে পানীয় তৈরি করে, তা অদ্ভুত! কফি ইংল্যান্ড যায় ষোড়শ শতাব্দীতেই। ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানি এতে অবদান রাখে। ইংল্যান্ডের প্রথম কফি হাউস চালু হয় লন্ডনের কর্নহিলে। সেন্ট মিখায়েলস অ্যালিতে। এর মালিকের নাম পাসকুয়া রোজি। এ ছাড়া ভেনিসে কফি পৌঁছায় ব্যবসায়ীদের হাত ধরে। মুসলমানদের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য সম্পর্ক ছিল। আফ্রিকা থেকেই অন্য অনেক পণ্যের সঙ্গে কফি যায় ভেনিসে। ১৬৬৯ সালে অটোমান সুলতান চতুর্থ মেহমেতের রাষ্ট্রদূত সুলেমান আগা প্যারিস গিয়েছিলেন। সঙ্গে নিয়ে ছিলেন অনেক কফি বিন। তিনি ফরাসি রাজদরবারেও কফি বিন উপহার পাঠিয়েছিলেন।

কাফে এসেছে কাহওয়া থেকে
কফি জার্মানিতে পৌঁছানোর কালেও এটিকে কাফে ডাকা হতো। কাফে এসেছিল কাহওয়া থেকে। একসময় কাফে হয়ে যায় কফি। অন্য সব দেশের মতো জার্মানিতেও প্রথম কফি জনপ্রিয় হয় বিত্তবানদের মধ্যে। উত্তর সাগরের বন্দর ব্রেমেন আর হামবুর্গে কফি শপ গড়ে ওঠে। বার্লিনে অবশ্য কফি শপ গড়ে ওঠে অনেক পরে ১৭২১ সালে। কফিগাছের চারা প্রথম দক্ষিণ আমেরিকায় নিয়ে যায় ডাচ্রা। কফির চাষাবাদ শুরু হয় মূলত হাওয়াইতে। ভারতে কফি চাষ শুরু হয় ১৬৭০ সালের দিকে। আসে বাবা বুদানের হাত ধরে ইয়েমেন থেকে। জাপানে যায় সতেরো শতাব্দীতেই। ১৮৮৮ সালে জাপানে প্রথম কফি হাউস চালু হয়। ১৯৩০ সালে সংখ্যাটি ৩০ হাজার ছাড়ায়। এশিয়ার মধ্যে ফিলিপাইনে ভালো কফি হয়।

কফির খবর
প্রতিদিন গড়ে ২.২৫ বিলিয়ন কাপ কফি সারা দুনিয়ায় পান করা হয়। ব্রাজিল বিশ্বের মোট চাহিদার প্রায় ৩৩ ভাগ জোগান দেয়। ২০০৪ সালে ১২টি দেশের প্রধান কৃষিজাত রপ্তানি পণ্য ছিল কফি।


বাংলাদেশে কফি
বাংলাদেশে চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় কফি চাষ হয়। রপ্তানিও হয়। বাড্ডার নর্থ অ্যান্ড কফি রোস্টারস পার্বত্য চট্টগ্রামের চাষিদের সঙ্গে মিলে কফি উত্পাদন করছে। মানেও বেশ ভাল.....(সংগৃহীত) 

No comments:

Post a Comment