খেলার সঙ্গে রাজনীতির যোগসূত্র নেই এটা মোটেও সঠিক কথা নয়। সভ্যতার আদিকাল থেকেই ক্ষমতা প্রদর্শনের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে খেলাকে। কিন্তু বার্সেলোনা আর রিয়াল মাদ্রিদ দ্বৈরথের মাঝে এই প্রসঙ্গ কেন?
ভাষার প্রশ্নই বা আসছে কোথা থেকে? কারণ, এই দ্বৈরথের পেছেন আছে দুটি অঞ্চলের মানুষের মাঝে দীর্ঘ শোষণ আর বঞ্চনার ইতিহাস! যে কারণে বার্সা-রিয়াল লড়াই আজও কেবল মাঠের খেলা নয়।
ভাষার প্রশ্নই বা আসছে কোথা থেকে? কারণ, এই দ্বৈরথের পেছেন আছে দুটি অঞ্চলের মানুষের মাঝে দীর্ঘ শোষণ আর বঞ্চনার ইতিহাস! যে কারণে বার্সা-রিয়াল লড়াই আজও কেবল মাঠের খেলা নয়।
বস্কে এবং কাতালুনিয়া এই দুই অঞ্চলের মানুষের প্রতিই দারুণ ক্ষোভ ছিল সেই সময়কার স্পেনের জেনারেল ফ্রাঙ্কোর। পাঠকদের নজরে হয়তো পড়েছে, এখনও বার্সার স্টেডিয়ামে 'উই আর নট স্পেন' লেখা ব্যানার দেখতে পাওয়া যায়। সেই সময়ও এই দুই অঞ্চলের মানুষদের এই একই মনোভাব বজায় ছিল। তারা স্বায়ত্বশাসন চেয়েছিল। স্পেন থেকে আলাদা হতে চেয়েছিল; আর এটাই মেনে নিতে পারেননি ফ্রাঙ্কো। তাই তিনি ঠিক করলেন, কোন আঞ্চলিক আন্দোলন বেড়ে উঠতে দেওয়া যাবে না। স্পেনে রাজত্ব থাকবে শুধু ক্যালিস্টদের। সবাইকে কথাও বলতে হবে ক্যালিস্টদের ভাষাতেই। আর এটাই গায়ে লাগল স্বাধীনতাকামী কাতালানদের। আইন করে যখন নিজস্ব ভাষায় কথা বলা বন্ধ করে দিলেন ফ্রাঙ্কো।
অসহায় কাতালানদের সমস্ত আশা-ভরসা প্রতিবাদের জায়গা হয়ে উঠল তাদের ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা। বার্সার স্টেডিয়াম হয়ে উঠল একমাত্র জায়গা, যেখানে তারা নিজেদের ভাষায় কথা বলতে পারত, নিজেদের পতাকা ওড়াতে পারত। বার্সেলোনা শুধু তো একটা ক্লাব নয়, একটা জাতিগোষ্ঠীর আশা-নিরাশার আশ্রয়স্থল!
কাতালানদের আছে দীর্ঘ বঞ্চনার ইতিহাস
১৯৪৩ কোপা দেল রের প্রথম লেগে ১ম লেগে ৩-০ ব্যবধানে জিতে বার্সা সমর্থকেরা শাসকদের বিপক্ষে উল্লাস করেছিল মাঠেই। মাদ্রিদ সমর্থকেরা এই ক্ষোভের আগুন মনের ভেতর জ্বালিয়ে রেখেছিল। ফিরতি ম্যাচে ব্যার্নাব্যুতে ১১-১ জিতেছিল লস ব্লাঙ্কোসরা। ২০ হাজার ক্ষিপ্ত উন্মত্ত সমর্থক 'কাতালান রক্ত' ঝরানোর আবেদন নিয়ে কোরাস গাইছিল! মাদ্রিদ সমর্থকেরা এতটাই হিংস্র হয়ে উঠে যে তারা বার্সা ফুটবলারদের মাথা কেটে ফেলার কথাও বলছিল বারবার। এরকম কোরাসে ভয় পেয়ে যান বার্সা ফুটবলাররা। নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবে স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারেননি তারা।
তৎকালীন বার্সা প্রেসিডেন্ট জোসেপ অ্যান্টনি এই ঘটনায় হকচকিয়ে গিয়ে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরে দাঁড়ান। দর্শকদের এমন আচরণ ও খেলার অন্যায় ফলাফল নিয়ে লিখেছিলেন বলে সাংবাদিক হুয়ান অ্যান্টোনিও সামারাঞ্চকে ১০ বছর কলম ধরতে দেয়া হয়নি। এই ম্যাচের পর থেকেই বদলে গেল রিয়াল-বার্সার ইতিহাস। আজকের এই আগুনে লড়াইয়ের সূত্রপাতও এই ম্যাচকে ঘিরেই। এমনি এমনি তো আর এক দলের সমর্থকেরা অন্য দলের সমর্থকদের দেখতে পারে না।
এল ক্ল্যাসিকোতে দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল ২৬৫ বার। এর মধ্যে বার্সা জিতেছে ১০৯ বার এবং রিয়াল জিতেছে ৯৭ বার। এবার এল ক্ল্যাসিকোর ২৬৬ তম লড়াইয়ে কে শেষ হাসবে সেটা দেখার অপেক্ষায় ফুটবল বিশ্ব। আর মাত্র ২৬ ঘন্টা। তারপরেই শুরু চরম উত্তেজনাপূর্ণ 'এল ক্ল্যাসিকো'। স্প্যানিশ ফুটবলের মর্যাদার লড়াইয়ে নামবে জিনেদিন জিদান ও লুইস এনরিকের শিষ্যরা। রিয়ালের ঘরের মাঠ বার্নাব্যুতে ৩ পয়েন্টের ব্যবধান কমিয়ে আনতে পারবে বার্সা নাকি রিয়াল ৬ পয়েন্টে এগিয়ে যাবে! আপাতত এই ম্যাচের দিকেই তাকিয়ে আছে বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীরা।
No comments:
Post a Comment