Recent Posts

LightBlog

Breaking

Sunday, November 27, 2016

সেরা পাচ আম্পায়ার

আমরা তো সব সময় খেলা নিয়ে মাতামাতি করি। খেলোয়াড়দের নিয়ে মাতামাতি করি। কিন্তু মাঠে যারা খেলা পরিচালনা করেন তাদের কথা কি কখনো ভাবি?

টেস্ট ম্যাচে সব দিকে নজরদারি রেখে টানা পাঁচদিন দাঁড়িয়ে থাকেন। আর ওয়ানডে ও  টি-টোয়েন্টিতে উত্তেজনায় আপনার যখন দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা, তখনো তিনি দাঁড়িয়ে থাকেন অবিচল হয়ে। একেবারে প্রত্যক্ষদর্শী অথচ উত্তেজনার কোনো রেশ যেন তাকে ছোঁয় না।

কিন্তু এসবের বাইরে যখন তিনি ভালো করেন, তখন তিনি আলোচনায় আসেন না। কখনো তার কথা বলি না। কিন্তু ভুল করে যদি ভুল করেন, তখন আমরা তার গোষ্ঠী উদ্ধার করার চেষ্টা করি। পাঠক নিশ্চয় আন্দাজ করতে পেরেছেন কাদের নিয়ে কথা বলছি। হ্যাঁ, আম্পায়ারদের নিয়ে কথা বলছি। আজ তাদের কথাই বলব।

ক্রিকেটে এ পর্যন্ত অনেকে আম্পায়ারিং করতে এসেছেন। ভালো করেছেন, আবার কেউ কেউ ভুল সিদ্ধান্ত দিয়ে বিতর্কিতও হয়েছেন। ক্রিকেটে সর্বকালের সেরা ১০ আম্পায়ারের আজ পড়ুন প্রথম পর্ব : 

ইয়ান গোল্ড :
ইয়ান গোল্ড তার সহকর্মী ও চারপাশের মানুষের কাছে গানার হিসেবেই বেশি পরিচিত। ১৯৫৭ সালের ১৯ আগস্ট ইংল্যান্ডে ইয়ান জন্মগ্রহণ করেন। তিনি স্বচ্চ  আম্পায়ার হিসেবে ইংল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করছেন। তিনি বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ও উইকেটরক্ষক হিসেবেও ইংল্যান্ডকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। আরো মজার ব্যাপার হলো, ইয়ান গোল্ডের ফুটবলের সঙ্গেও সখ্যতা ছিল! বিখ্যাত ইংলিশ ক্লাব আর্সেনালের গোলকিপার হয়ে খেলেছেন। সেখানেই তার ডাক নাম ছিল গানার।

তিনি ২০০৮ সালে বাংলাদেশ বনাম সাউথ আফ্রিকার ম্যাচ দিয়ে তার টেস্ট ক্রিকেটে আম্পায়ারিংয়ের ক্যারিয়ার শুরু করেন। আর ২০০৬ সালের শুরুর দিকে ইংল্যান্ড বনাম শ্রীলংকা ম্যাচ দিয়ে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের আম্পায়ারিং ক্যারিয়ার শুরু হয় তার। আম্পায়ার হিসেবে গোল্ড সুনামও কুড়িয়েছেন। এই পর্যন্ত তিনি ৫৬টি টেস্ট, ১১৪টি একদিনের আন্তর্জাতিক ও ৩৭টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ পরিচালনা করেছেন। যদিও তিনি ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে, ২০০৭ সালে রোজ বোলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লিটল মাস্টার শচীনকে ৯৯ রানে ভুল আউট দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। কিন্তু এই পর্যন্ত খেলা ম্যাচগুলোর পর গোল্ড নিজের আম্পায়ারিং ক্যারিয়ারের স্বচ্চ ইমেজ তৈরি করেছেন বলেই বলা যায়।

টনি হিল :
অ্যান্থনি লয়েড হিল সার্কিট নামেই বেশি পরিচিত। ১৯৫১ সালের ২৬ জুন নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মগতভাবে তিনি কিউই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আম্পায়ারিংয়ে টনির ক্যারিয়ার বেশ সমৃদ্ধ।  ১৯৯৮ সালে নেপিয়ারে নিউজিল্যান্ড বনাম জিম্বাবুয়ের একদিনে আন্তর্জাতিক ম্যাচ দিয়ে তার ক্যারিয়ার শুরু হয়।



আর ২০০১ সালে হ্যামিল্টনে বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ডের টেস্ট ম্যাচ দিয়ে টেস্টে তার আম্পায়ারিং ক্যারিয়ার শুরু। ২০০৯ সাল তার জন্য সবচেয়ে ভালো বছর। কারণ এই বছর তিনি আইসিসির আম্পায়ারদের এলিট প্যানেলে ঢুকে যান। ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি ৪০টি টেস্ট, ৯৬টি ওয়ানডে ও ১৭টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ পরিচালনা করেছেন।

ডেরেল হারপার :
ডেরেল জন হারপার ১৯৫১ সালের ২৩ অক্টোবর দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে জন্মগ্রহণ করেন। অস্ট্রেলিয়ান আম্পায়ারদের মধ্যে হারপার সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। ১৯৮৩ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়া থেকে আম্পায়ারিং শুরু হয়, কিন্তু তার মতো এত সমৃদ্ধ ক্যারিয়ার আর কারও ছিল না। তিনিই প্রথম অস্ট্রেলিয়ান আম্পায়ার যিনি আইসিসির এলিট প্যানেলে নাম তুলতে পেরেছিলেন। ১৯৯৮ সালে শুরু হওয়া তার টেস্ট আম্পায়ারিংয়ের ক্যারিয়ার শেষ হয় ২০১১ সালে।



২০১১ সালে তাকে আম্পায়ারিং থেকে অবসর নিতে বাধ্য করা হয় এই অভিযোগে যে, তার আম্পায়ারিংয়ের মান সব সময় খুব নিম্ন ছিল। ১৯৯৮ সালে পার্থে অস্ট্রেলিয়া বনাম ইংল্যান্ড টেস্ট ম্যাচ দিয়ে তার টেস্ট আম্পায়ারিং ক্যারিয়ার শুরু হয়। আর ১৯৯৪ সালে একই মাঠে অনুষ্ঠিত নিউজিল্যান্ড বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ দিয়ে ওয়ানডে আম্পায়ারিং ক্যারিয়ার শুরু হয়। সব মিলিয়ে তিনি ৯৫টি টেস্ট, ১৭৪টি ওয়ানডে ও ১০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ পরিচালনা করেছেন।  

স্টিভ বাকনার:
স্টিফেন অ্যান্থনি বাকনার বা স্টিভ বাকনার ছিলেন সবচেয়ে অভিজ্ঞ আম্পায়ারদের একজন। ১৯৪৬ সালের ৩১ মে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জ্যামাইকায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাকনার মূলত ফুটবল খেলার রেফারি ছিলেন। ৪৫ বছর বয়সে তিনি ক্রিকেট আম্পায়ারিংয়ে আসেন। ১৯৮৯ সালে কিংস্টনে অনুষ্ঠিত ভারত বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট দিয়ে তিনি টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু করেন। একই বছর অ্যান্টিগায় একই দলের মধ্যে অনুষ্ঠিত ম্যাচের মাধ্যমে তার ওয়ানডে আম্পায়ারিং শুরু হয়। তিনিই প্রথম আম্পায়ার যিনি ২০০৫ সালে ১০০টি টেস্ট ম্যাচ পরিচালনার মাইলফলক স্পর্শ করেন। এরে আগে ডিকি বার্ডস ২০০২ সাল পর্যন্ত ৬৬টি টেস্ট পরিচালনা করে রেকর্ড করেছিলেন।


তিনি সর্বোচ্চ ১২৮টি টেস্ট ম্যাচ পরিচালনা করেছেন। যা এখন পর্যন্ত আর কেউ পারেননি। বাকনার ১৯৯২ সাল থেকে ২০০৭ পর্যন্ত পাঁচটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনাল ম্যাচ সফলভাবে পরিচালনা করেছেন। তবে তিনি তার ক্যারিয়ার শেষ করেন বিতর্কের সঙ্গে। ২০০৭ সালে ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়ার টেস্টে বেশ কয়েকটি ভুল সিদ্ধান্ত দিয়ে এই বিতর্কের সৃষ্টি করেন তিনি। যে কারণে তার আম্পায়ারিংয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। কয়েকমাস পর অবশ্য বাকনার অল্প সময়ের জন্য ফিরে এসেছিলেন আম্পায়ারিংয়ে। কিন্তু ২০০৯ সালে তিনি অবসর ঘোষণা করেন। 

আলিম দার :
১৯৬৮ সালের ৬ জুন পাকিস্তানের পাঞ্জাবে আলিম দার জন্মগ্রহণ করেন। আলিমদার জাতীয় পর্যায়ে ক্রিকেট খেলেছেন। ডানহাতি মিডল ওর্ডার ব্যাটসম্যান ও লেগ স্পিনার ছিলেন তিনি। মাত্র ৩২ বছর বয়সে এই পাকিস্তানি তার আম্পায়ারিং ক্যারিয়ার শুরু করেন। ২০০০ সালে গুজরানওয়ালায় পাকিস্তান বনাম শ্রীলংকার মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে তার ওয়ানডে আম্পায়ারিং ক্যারিয়ার শুরু হয়। আর ২০০৩ সালে ঢাকায় বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে টেস্টে তার আম্পায়ারিংয়ের ক্যারিয়ার শুরু হয়। টেস্টে আম্পায়ারিংয়ের মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে তিনি সবচেয়ে কম বয়সে আইসিসির এলিট প্যানেলে ঢুকে যান।



তিনি ২০০৯, ২০১০ ও ২০১১ সালে ধারাবাহিকভাবে আইসিসির বর্ষসেরা আম্পায়ারের পুরস্কার জিতেছেন। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে তিনি তার সবচেয়ে নিখুঁত আম্পায়ারিংয়ের নজির স্থাপন করেন। কারণ ওই বিশ্বকাপে তার দেওয়া ১৫টি সিদ্ধান্ত রিভিউ সিস্টেমের সঙ্গে যুদ্ধ করে জয়ী হয়। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে স্বচ্চ আম্পায়ার আলিম দার।  এই পর্যন্ত তিনি ১০৭টি টেস্ট, ১৮২টি ওয়ানডে ও ৪১টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ পরিচালনা করেছেন।

No comments:

Post a Comment