Recent Posts

LightBlog

Breaking

Sunday, November 27, 2016

মার্কিন ফাস্ট লেডিগন

লরা বুশ। (নিচে বাঁ দিক থেকে) ন্যান্সি রিগ্যান, হিলারি ক্লিনটন, গ্রেস কুলিজ, ফ্রান্সেস ক্লিভল্যান্ড, জ্যাকুলিন কেনেডি, মেলেনিয়া ট্রাম্প। অলংকরণ: অপূর্ব খন্দকার

আসিফ রাতুল : তারা হচ্ছেন, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর মানুষের স্ত্রী। বিভিন্ন সময় তারা ক্ষমতা, সৌন্দর্য এবং সহজাত দক্ষতা নিয়ে হাজির হয়েছেন।

এই নারীরা হোয়াইট হাউস চালানো, চ্যারিটি অনুষ্ঠান চালানো, রাষ্ট্র নৈশভোজে অতিথি অ্যাপায়নে যেমন দায়িত্ব পালন করেন তেমনি তাদের ক্ষমতাবান স্বামীদের সঙ্গে জনসমক্ষে খুব সুন্দরভাবে হাজির হতে চেষ্টা করেন। এবং এক্ষেত্রে তারা কখনোই হতাশ করেন না।

তারা খুব সুরুচিপূর্ণ পোশাক পরিধান করে থাকেন। তাদের অ্যাকসেসরিজগুলো খুবই অভিজাত এবং বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বিলাসবহুল হয়ে থাকে। এ প্রতিবেদনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আকর্ষণীয় শীর্ষ ১১ ফার্স্ট লেডির পরিচয় তুলে ধরা হল।

১১. বারবারা বুশ (১৯৮৯-১৯৯৩)
তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪১তম প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ. ডব্লিউ. বুশ এর স্ত্রী। কলেজে পরিচিত হওয়ার কয়েক বছর পর বারবারা তরুণ বয়সে জর্জ বুশ সিনিয়রকে বিয়ে করেন। তিনি দাবী করেন যে, তিনি জীবনে প্রথমবারের মতো একমাত্র যে পুরুষটিকে (জর্জ এইচ. ডব্লিউ. বুশ) চুমু দিয়েছিলেন, তাকেই তিনি বিয়ে করেছেন। বারবারা যথেষ্ট ভাগ্যবান যে, তিনি যার সঙ্গে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন, সেই মানুষটি পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের ৪১তম প্রেসিডেন্ট হন এবং তাদের অন্যতম সন্তান জর্জ ডব্লিউ বুশ যুক্তরাষ্ট্রের ৪৩তম প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন।

১০. মিশেল ওবামা (২০০৮-২০১৬)

কথায় আছে ‘জাম যত কালো, রস তত মিষ্টি’ এবং এই কথাটি মিশেল ওবামার ক্ষেত্রে অবশ্যই সত্য। তিনি বর্তমান ফার্স্ট লেডি নভেম্বর, ২০১৬ পর্যন্ত। এবং আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফার্স্ট লেডি। তার চালচলন ও ফ্যাশন শৈলী শীর্ষ পর্যায়ের।

৯. প্যাট নিক্সন (১৯৬৯-১৯৭৪)
তিনি তার স্বামী রিচার্ড নিক্সনের প্রশাসনের ফার্স্ট লেডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রিচার্ড ছিলেন  যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭তম প্রেসিডেন্ট। এই স্বর্ণকেশীর উচ্চতা ছিল ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি এবং তার চোখ ছিল হালকা বাদামি। তিনি শিক্ষাকে সত্যিই অনেক মূল্য দিতেন এবং তিনিই হচ্ছেন প্রথম ফার্স্ট লেডি যার বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি ছিল। তিনি খুবই মানবিক ছিলেন এবং তিনি তার নামে একাধিক শিশুআশ্রম পরিচালনা করতেন। তার অসংখ্য ভ্রমণের দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় যে ভ্রমণ তার একটি শখ ছিল। তিনি ৮১ বছর বয়সে ফুসফুসের ক্যানসারে মৃত্যুবরণ করেন।

৮. রোজালিন কার্টার (১৯৭৭-১৯৮১)
তিনি ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ফার্স্ট লেডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের স্ত্রী তিনি। তিনি বাড়িতে আবদ্ধ থাকার মতো নারী ছিলেন না বরঞ্চ স্বামীর প্রশাসনে তিনি ব্যাপকভাবে রাজনৈতিক ও প্রসাশনিক কাজে যুক্ত ছিলেন। তিনি ল্যাটিন আমেরিকার একজন বিদেশী রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং নিয়মিতভাবে মন্ত্রিসভা বৈঠকে বসেছিলেন। তিনি মানসিক রোগীদের কল্যান এবং তাদের জন্য গবেষণা প্রকল্পে অনুদান দিতেন। তিনি খুবই মার্জিত পোশাক পরা পছন্দ করতেন। তিনি সবসময়ই নিঃস্বার্থ মানবিক কাজের জন্য উদগ্রীব ছিলেন।

৭. লরা বুশ (২০০১-২০০৯)
তিনি বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হোন জর্জ ডব্লিউ বুশের সঙ্গে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৩তম প্রেসিডেন্ট। লরা বুশ আমেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় ফার্স্ট লেডিসদের মধ্যে একজন। তিনি তার স্বামীর গভর্নর নির্বাচনের প্রচারাভিযান থেকে শুরু করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারাভিযানে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। নির্বাচনের প্রচারাভিযানে তিনি দুর্দান্ত বক্তব্য দিয়েও অনেক সমর্থক তৈরি করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে স্বামীর জয়ের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি ফার্স্ট লেডি হিসেবে স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার ওপর অনেক কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন। তিনি রান্না করতে পছন্দ করতেন এবং অনেক বিখ্যাত রেসিপি তৈরি করেছিলেন, যা আমেরিকার অনেক বাড়িতে খুব জনপ্রিয় রেসিপি ছিল।

৬. ন্যান্সি রিগ্যান (১৯৮১-১৯৮৯)
তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪০তম প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের স্ত্রী। বিয়ের আগে তিনি একজন অভিনেত্রী ছিলেন এবং ফার্স্ট লেডি হওয়ার পরও তিনি থিয়েটার এবং অভিনয় অনেক ভালোবাসতেন। হোয়াইট হাউসে বিদেশীদের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় নৈশভোজনের সময় তিনি বিভিন্ন নাটক ও বাদ্যযন্ত্রের পারফরম্যান্সে অংশগ্রহণ করতেন। তার স্টাইলের ধরন ছিল প্রশ্নাতীত, তিনি বিশ্বের সেরা ডিজাইনারদের দ্বারা তৈরি পোশাক পরতেন। তিনি তার এই শখের জন্য অনেক সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন কিন্তু কখনো এই সমালোচনার তোয়াক্কা করেননি। তার ধারণা ছিল, ফার্স্ট লেডি হিসেবে তাকে অবশ্যই ভালো দেখতে হবে এবং তার এই ধারণাই তাকে আমেরিকার ইতিহাসে অন্যতম আকর্ষণীয় ফার্স্ট লেডিস হিসেবে স্থান করে দেয়।

৫. হিলারি ক্লিনটন (১৯৯৩-২০০১)
হিলারি ক্লিনটন সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ফার্স্ট লেডি ছিলেন। তিনি হচ্ছেন নির্ভীক স্বভাবের এবং তিনি তার মহত্বের জন্যও অনেক মহান। অনেক সৌন্দর্যের অধিকারী হয়েও তাকে প্রতারিত হওয়ার যন্ত্রণায় ব্যথিত হতে হয়েছে। তার স্বামী বিল ক্লিনটনের সঙ্গে হোয়াইট হাউসের এক কর্মীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তার কাছে সম্পর্ক ছেদ করার মতো যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত এই কারণ থাকা সত্ত্বেও তিনি তার স্বামীর পাশে থেকেছেন। তিনি জীবনের এই অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে আরো মহান উচ্চতায় নিজেকে নিয়ে গেছেন। পরবর্তীতে তিনি সিনেটর ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থীও ছিলেন তিনি।

৪. গ্রেস কুলিজ (১৯২৩-১৯২৯)
তিনি ১৯২৩ সাল থেকে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত ফার্স্ট লেডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ৩০তম প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলিজের বিয়ে হয়। তিনি সুন্দর চোখের অধিকারিণী ছিলেন এবং তার হাসি খুব চমৎকার ছিল যা সবচেয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন মুডকেও উজ্জ্বল করে দিত। তিনি অনেক আকর্ষণীয় ছিলেন এবং প্রায়ই তিনি জামাকাপড়ের মধ্যে দিয়ে তার শারিরীক গঠন প্রকাশ করতেন।

৩. ফ্রান্সেস ক্লিভল্যান্ড (১৮৮৬-১৮৮৯ এবং ১৮৯৩-১৮৯৭)
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তিনি হচ্ছেন সর্বকনিষ্ঠ ফার্স্ট লেডি। আমরা সবাই জানি যে, তরুণী মানেই আকর্ষণীয়  এবং উত্তেজনাকর। ২১ বছর বয়সে তিনি প্রথমবার ফার্স্ট লেডি হয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের ২২তম প্রেসিডেন্ট ৪৯ বছর বয়সী গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড এর স্ত্রী ছিলেন তিনি। মুদ্ধকর এই তরুণী ফার্স্ট লেডি আমেরিকানদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় ও খ্যাতিবান নারী হয়ে উঠেছিলেন। ১৮৯৩ সালে গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড ২৪তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় তিনি আবারও ফাস্ট লেডি হয়েছিলেন। 

২. জ্যাকুলিন কেনেডি (১৯৬১-১৯৬৩)
তিনি সুন্দর ‍মুখ এবং চমৎকার হাসির অধিকারী ছিলেন। তিনি একজন ফ্যাশন আইকন ছিলেন এবং তার সাজসরঞ্জাম সমাহারের কিছু এখনও আপ টু ডেট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫তম প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডির স্ত্রী ছিলেন।

১. মেলেনিয়া ট্রাম্প (২০১৬-...)

মেলেনিয়া ট্রাম্প একজন সাবেক স্লোভেনীয় আমেরিকান মডেল এবং যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ফার্স্ট লেডি। তার জন্ম স্লোভেনিয়ায়, তিনি ২০০১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন স্থায়ী বাসিন্দা এবং ২০০৬ সালে আমেরিকান নাগরিক হয়ে ওঠেন। তিনি ১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্ক সিটির একটি ফ্যাশন সপ্তাহ পার্টিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে পরিচিত হন, তখন ট্রাম্প মারলা ম্যাপলেসের সঙ্গে বিবাহিত থাকার পরও পৃথক থাকতেন। ২০০৪ সালে সম্পর্কে জড়িত হওয়ার পরে, ডোনাল্ড এবং মেলেনিয়া ২০০৫ সালের ২২ জানুয়ারিতে বিবাহে আবদ্ধ হন। তিনি ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডির ভূমিকা পালন করবেন।

No comments:

Post a Comment